লিওনেল মেসির সঙ্গে তুলনা তাঁর অপছন্দ। কিন্তু মানুষ চাইলেই কি সব হয়?
ভাগ্যলিখনে অন্যকিছু থাকলে কিছুই করার থাকে না। লামিনে ইয়ামালের ক্ষেত্রেও ঠিক তা–ই। মেসির সঙ্গে তুলনা তাঁর ভালো লাগে না, কিন্তু বিধিলিপি তাঁকে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির সঙ্গে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে যে চাইলেও এখন আর কিছু করার নেই। মেসির সঙ্গে ইয়ামালের তুলনা চলছেই, চলবেই, কে জানে সামনের দিনগুলোয় হয়তো আরও বাড়বে!
দুজনের মধ্যে এ তুলনাটা চলছে বার্সেলোনাকে কেন্দ্র করে। বার্সায় মেসির খেলার ধরনের সঙ্গে ইয়ামালের খেলার মিল পাচ্ছেন অনেকেই। একই জার্সিতে মেসির মতোই ডান উইংয়ে খেলেন ইয়ামাল, মেসির মতোই বাঁ পায়ের ফুটবলার, কিন্তু দুটো পা–ই চলে ছুরির মতো, ডান প্রান্ত দিয়ে রক্ষণ ছিঁড়েখুঁড়ে কাট–ইন করে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে গোল করাতেও মেসিকে মনে করিয়ে দেন ইয়ামাল। মিল আছে আরও। সেটা সরাসরি নয়, অদৃষ্টের মারপ্যাঁচও বলতে পারেন।
ইয়ামালের বয়স যখন ৬ মাস, মেসি তখন বার্সায় ২০ বছরের টগবগে তরুণ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘দারিও স্পোর্ত’ ও ইউনিসেফের পরিচালনায় বার্ষিক চ্যারিটির অংশ হিসেবে ক্যালেন্ডারের জন্য বার্সার খেলোয়াড়েরা বেশ কয়েকটি পরিবারের শিশুদের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। সেদিন দৈব নির্দেশনাতেই যেন মেসি দাঁড়িয়েছিলেন ৬ মাস বয়সী ইয়ামাল ও তাঁর মায়ের পাশে। এরপর ইয়ামালকে কোলে নেওয়ার পাশাপাশি একটি গামলায় গোসল করিয়ে দেন মেসি। গত বছর জুলাইয়ে ইয়ামালের বাবা সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ পোস্ট করার পর অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নিয়ে বলেছিলেন, এ এক অলৌকিক ‘ব্যাপ্টিজম’ (দীক্ষাদান)—কারণ, ইয়ামালের সঙ্গে তত দিনে মেসির তুলনা শুরু হয়েছে, ইয়ামাল তত দিনে বার্সার ভবিষ্যৎও।
এখন বর্তমান। মানে বার্সেলোনায় মেসি যেমন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন, ইয়ামালও তেমনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার খুব কাছাকাছি, কারও কারও মতে কেন্দ্রবিন্দুই। এই তো গত বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে চোখধাঁধানো এক গোল করলেন। বার্সার জার্সিতে সেটা আবার শততম ম্যাচও। কাতালান ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দল থেকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মূল দলে অভিষেক ঘটিয়ে ইয়ামাল যেভাবে শততম পেশাদার ম্যাচ খেলে ফেললেন, মেসির শততম ম্যাচের পথরেখাও কিন্তু একই। ইয়ামালের মতোই বার্সার ফুটবল খামার ‘লা মাসিয়া’ থেকে বয়সভিত্তিক দল ঘুরে মূল দলে ১৬ বছর বয়সে তাঁর অভিষেক। বাকিটা ইতিহাস। সেই ইতিহাসে ১০০তম ম্যাচ স্রেফ একটি পালক।
এখন এ দুটি ‘পালক’–এর মধ্যেও তুলনা উঠেছে
অবশ্য তুলনা বললে একটু ভুল হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে, বার্সেলোনার হয়ে ১০০তম ম্যাচ পর্যন্ত কার পারফরম্যান্স বেশি ভালো? মেসি না ইয়ামালের? নেটিজেনদের কেউ কেউ অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই উত্তরটি অন্যভাবে দিয়েছেন। সেটি মিম বানিয়ে। ‘স্পাইডারম্যান’ সিনেমায় অবিকল একই রকম (শুধু পোশাকের রংটা আলাদা) দুজন স্পাইডারম্যান মুখোমুখি হয়ে যেভাবে অবাক হয়ে একে অপরকে দেখে, তেমন একটি ছবিই পোস্ট করে মেসি–ইয়ামালের মধ্যে তুলনা টেনেছেন নেটিজেনরা। অর্থাৎ বেশি পার্থক্য নেই—সেটা অবশ্যই ১০০ ম্যাচ পর্যন্ত। কারণ, মেসি পরবর্তী সময়ে নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, সেখানে আর কেউ কখনো পৌঁছাতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
যাহোক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মজা চললেও কোমর বেঁধে নেমে প্রশ্নটির উত্তর খুঁজেছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’। সেই উত্তরেও মেসির সঙ্গে ইয়ামালের তেমন পার্থক্য নেই। সর্বোচ্চ উনিশ–বিশ কিংবা আঠারো–বিশ!

