প্রথমে দেখতে মনে হবে, সাধারণ একটি বিশাল বুলডোজার, যা ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় একটি পরীক্ষামূলক স্থানে মাটি খনন করছে। কিন্তু যখন সেটি আরও কাছে আসে, তখন বিষয়টি বোঝা যায় যেচালকের কেবিনটি পুরোপুরি খালি। এই ভারী যন্ত্রকে বলা হচ্ছে রোবোডোজার।
বুল ডোজারের মতো এই রোবটটি একটি সুরক্ষিত প্রকৌশল যন্ত্র যা দূর থেকে পরিচালিত হয়। এই ক্ষেত্রে এটি পরিচালিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় একটি সামরিক প্রদর্শনী থেকে।
সামরিক প্রকৌশলী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাটারপিলারের ডি৯ বুলডোজারের রোবোটিক সংস্করণ ‘রোবডোজার’ হল ভবিষ্যতের স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধ যন্ত্র।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ডি৯ ব্যবহার করে আসছে অনেক বছর ধরে, রাস্তা তৈরি, ধ্বংসাবশেষ সরানো এবং ভূমি সমতল করার মতো ফ্রন্টলাইন কাজগুলোতে।
তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, এবং এর পরে লেবাননেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর, ইসরায়েল সেনাবাহিনী এই রোবোটিক সংস্করণটি আরও বেশি করে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তাদের যুদ্ধ কার্যক্রম বাড়ানোর এবং সেনাদের ঝুঁকি কমানোর জন্য।
ইসরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের ‘রোবডোজার’ প্রকল্পের উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারী রনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বুলডোজারের ককপিট থেকে মানুষকে সরিয়ে দেওয়া।’
রনি বলেন, গাজা যুদ্ধে সেনাবাহিনী ক্রমশ চালকবিহীন এই সংস্করণটি ব্যবহার করছে, যা ‘মানবচালিত যন্ত্রের তুলনায় আরও ভালোভাবে’ সব কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম।’
যদিও বর্তমানে এই রোবডোজার ও অন্যান্য প্রযুক্তি মানুষের দ্বারা পরিচালিত, ভবিষ্যতে এটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হতে পারে, যা যুদ্ধের ভবিষ্যত নিয়ে নৈতিক ও আইনি প্রশ্ন তুলতে পারে । ইসরায়েলের যুদ্ধক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রবণতা—যেমন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক গোয়েন্দা সরঞ্জাম—প্রতিবেদন এবং সমালোচনার মাধ্যমে সামনে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘রোবডোজার’-এর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের স্বয়ংক্রিয়করণ বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে, যেমন দূরনিয়ন্ত্রিত সাঁজোয়া যান, যা ড্রোনের মতোই কাজ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রোবোটিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে আসছি, তবে সেগুলি ছিল খুবই সীমিত। এখন তা বড় পরিসরে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, সেনারা এখন শত্রু ভূখণ্ডে প্রবেশ না করেই যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে পারছে।
লন্ডনভিত্তিক হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির গবেষক ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর অ্যান্ড্রু ফক্স বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সম্ভবত প্রথম যেটি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে দূরনিয়ন্ত্রিত রণযন্ত্র ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় অগ্রগতি। এটি যুদ্ধের ধারণাই পাল্টে দিচ্ছে—একই কাজ হচ্ছে, কিন্তু অনেক কম ঝুঁকির সাথে।’

